আলো'চিত সংবাদ

৩৬ বছরে ১১৮ বার রক্ত দিয়ে দেশসেরা

জাকারিয়া বিশ্বাস যখন প্রথম রক্ত দেন তখন তার বয়স ছিল ২৫ বছর। ১৮ বছর বয়স থেকে রক্ত দেওয়া যায় এ তথ্য জানতেন না তিনি।

সাত বছর আগে কেন এই তথ্য জানতেন না তা নিয়ে এখন আফসোস করছেন জাকারিয়া। তাহলে তার রক্তদানের সংখ্যা আরও বাড়তে পারত। দেশে রক্তের যে সংকট, তা থাকত না যদি জাকারিয়া বিশ্বাসের মতো আরও অনেক মানুষ থাকতেন। সেই ১৯৮৬ সাল থেকে শুরু। ৩৬ বছরে তিনি রক্ত দিয়েছেন ১১৮ বার।

রক্তদানে দেশসেরা হওয়া জাকারিয়া খুলনার ঝিনাইখালী গ্রামের হাইস্কুল জেকেএজি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন। চাকরি জীবন শেষ হয় ২০১১ সালে। ততদিনে রক্তদানকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেন তিনি। প্রতি তিন মাস অন্তর রক্ত দেয়া যায় বলে যে কথা চিকিৎসকেরা বলে আসছেন, সেটি করে দেখিয়েছেন তিনি। কখনও সখনও তিন মাসের জায়গায় চার মাস হয়েছে, তবে নিয়মিত রক্ত দান থেকে দূরে থাকেননি তিনি।

জাকারিয়ার রক্ত দানের শুরুটা ছিলো অন্যরকম। ১৯৮৬ সালে যশোরে তার একটি দুর্ঘটনা ঘটে। আহত মানুষটিকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন তার রক্তের দরকার ছিল। সে সময় তাকে রক্ত কিনে দেন জাকারিয়া। তিন দিন পর তাকে দেখতে গিয়ে দেখেন, সন্ধানী থেকে রক্ত দেয়া হচ্ছে হাসপাতালের সামনে। তাদের দেখেই রক্তদানে উৎসাহ পান, আর থামেননি।

জাকারিয়া সংবাদমাধ্যমকে বলেন, মানুষের জন্য কাজ করতে চাই, তাই রক্ত দেয়। যশোরে আমার সামনে এক ব্যক্তির অ্যাক্সিডেন্ট হয়। পায়ে আঘাত লেগে রক্ত পড়ে অনেক। তখন তাকে রক্ত দিই। সেই থেকেই শুরু। আমি আগে জানতাম না কত বছর বয়স থেকে রক্ত দেয়া যায়। তাহলে ১৮ বছর থেকেই দিতাম। সে সময় বেশির ভাগ রক্ত কিনে দিতে হতো। আর এই কেনাবেচা দেখে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহ দিতে নিজের এলাকার মানুষদের উদ্বুদ্ধও করেন তিনি।

খুলনাতেও রক্তদানে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সন্ধানীর শাখা চালু করেছেন জাকারিয়া। রক্ত দিয়ে মানুষের জীবন বাঁচানোর যে চেষ্টা, তার স্বীকৃতি মিলেছে বহুবার। ২০২০-২১ সালে সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদ সর্বোচ্চ রক্তদাতা হিসেবে সম্মাননা দেয়। ২০১৬ সালের গত ১৪ জুন ‘নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন দিবসে’ সর্বোচ্চ রক্তদাতা হিসেবে পুরস্কৃত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরর। ২০১২ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগিতায় ‘সর্বোচ্চ স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সম্মাননা ২০১২’, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের উদ্যোগে বিশ্ব রক্তদাতা দিবসের সম্মাননা ২০১৪, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে বোয়ান আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে হামদর্দের পক্ষ থেকে পান সন্মাননা।

Close